শান্তুনু হাসান খান।।
দ্বাদশ সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে আগামী ১৪ মার্চ ভোটের দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৭ তম এই কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ভোট ১৪ মার্চ। এ নির্বাচনে ভোটের জন্য একটি দিন রাখা হলেও ফল জানা যায় তার আগেই। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপীতে দল ও জোটগতভাবে সমান সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে বলে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। সংসদের সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ভোটার হন। সংসদে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ এমপির হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুপাতিক হারে পাচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে। বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পাটি।
দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে শুরু হয়েছে ৩০ জানুয়ারি। কাজ দ্রুত শেষ হলে এ অধিবেশনেই সংরক্ষিত নারী সাংসদরা যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। সেই আলোকে সারাদেশ থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীতা এবার কম নয়। প্রায় ১৫৬৪ জন ফরম সংগ্রহ করেছেন। অনেক বড় জেলা হিসেবে কুমিল্লায় ফরম সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৪৬ জন মহিলা প্রার্থী। এর মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন ১৬ জন মহিলা প্রার্থী। এর মাঝে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনায় আছেন কুমিল্লা দেবিদ্বারের অন্যতম শিরিন সুলতানা। কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন এই শিরিন সুলতানা।
এর আগে তিনি পরপর ২ বার জেলা পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। তার বর্ণাঢ্য জীবনের আলোকে এবার দলের সভাপতি তথা জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ দলে অনেক নীতি নির্ধারকদের পছন্দের তালিকা রয়েছেন তিনি। বেড়ে উঠেছেন দেবিদ্বারে। মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষে তাদের পরিবার, বঙ্গবন্ধু আদর্শ লালন করেন তাদের গোটা পরিবার। পড়াশোনা করেছেন স্থানীয় মফিজ উদ্দিন গার্লস্ হাই স্কুলে পরে সুজাত আলী ডিগ্রি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধু আদর্শ লালন করতেন। ১৯৮১-৮২ সেশনে কলেজ ছাত্রলীগের প্যানেলে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে লাইম লাইটে চলে আসেন। এর পর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি।
১৯৯৭ সালে আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা ফখরুল ইসলাম মুন্সীর এক সমাবেশে প্রায় ৫শ মহিলা কর্মী নিয়ে শিরিন সুলতানা আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করেন। মাঝখানে দীর্ঘদিন জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করে নন্দিত হয়েছেন। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমী সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন ‘আমি জেলা পরিষদের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারলেও বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন অবদান রাখতে পারছিলাম না। সেই সুযোগটি জেলা পরিষদের নেই। আর নেই বলে এবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপে সংসদে যেতে চাইছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস-সিলেকশেন কমিটি তথা আমার নেত্রী-জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার অতিতের পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ও স্ট্যাটাস বিবেচনা করে ইনশাল্লাহ্ দ্বাদশ সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসেন এমপি হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি আগামী দিনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল কর্মপন্থা বাস্তবায়ন সহ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণে কাজ করে যাব।’
শিরিন সুলতানা আরও বলেন দেশের নারী উন্নয়নকে কোন ভাবে খাটো করে দেখার বিষয় নেই। আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকারের কথা বলা হচ্ছে। তার পরেও আমি চাইবো আমার এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উন্নয়নের কাজ করে যেতে। পাশাপাশি নারী উদ্যোগক্তা বিনির্মানে কাজ করতে চাই। যদি নারী সংসদদেরকে একটু সহযোগিতা করা হয় তাহলে টেকসই উন্নয়নে আমরা যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। শিরিন সুলতানা আরো বলেন, এবারের ইস্তেহারে প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা আর রেমিটেন্স এর উপর অনেক জোর দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ইশতেহার প্রকাশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির জিরো ট্রলারেন্স বিরুদ্ধে (শূণ্য সহনশীলতা) ঘোষণা করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করে গেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় দুর্নীতির আগ্রাসন থেমে থাকেনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো, মূল্যস্ফীতিও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই ইশতেহার বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে সরকার বাংলাদেশের জন্যে একটি সমৃদ্ধ ও টেকসই অর্থনীতির নিশ্চিত করবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি।
পরিশেষে শিরিন সুলতানা বলেন, এবারে সাংসদের মাধ্যমে জনগণকে তথা নারী সম্প্রদায়কে আমি আশস্থ করতে চাই- এই বলে, নারীকে উন্নয়নের সোপান হিসেবে তাঁদের উন্নয়নে কাজ করার সুবিধার পথ সুগম করা যেতে পারে। আর সে প্রচেষ্টা আমার নেত্রী প্রতিনিহিত করে রাখছেন। আমরা তাঁর সহযোগী হিসেবে পাশে থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানে ২০৪১ সালের উন্নত বিশ্বের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া চেষ্টা করবো। আর সেটা সম্ভব আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব।
এদিকে সংসদীয় কমিটির ৮জন কুমিল্লার এমপি হয়ে অনেক কাজ করবেন বলে আশাবাদী। তাদের দিক নির্দেশনায় আমাদেরকে আগামী দিনের সাহায্য করবে।
সর্বশেষ ৪৮ জনের মাঝে ২ জন মহিলা এমপি হবেন কুমিল্লার জন্য। এর মাঝে ফরম সংগ্রহ করেছেন সাবেক সংরক্ষিত সংসদের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ফাহমিদা জেবিন, সাবেক সংরক্ষিত আসনের মহিলা আওয়ামীগের জোবেদা খাতুন পারুল, চিত্র নায়িকা নিপুন আক্তার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, সাবেক সংরক্ষিত সদস্য এ্যারোমা দত্ত, দেবিদ্বারের কেন্দ্রীয় মহিলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তার, নাঙ্গলকোটের জেলা পরিষদের সদস্য নাছরিন আক্তার মুন্নি, কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন সুলতানা, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সাজেদা মায়া, কুমিল্লা ৫ আসনের মরহুম হাসেম খানের কণ্যা ব্যারিষ্টার নাজিয়া হাসেম তানজিন, মুরাদনগরের উপজেলা মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আসমা বেগম রতœা, হোমনার সাবেক সংসদ সেলিমা আহমেদ মেরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগৈর সাধারণ সম্পাদক কোহিনূর বেগম ও চৌদ্দগ্রামের আয়েশা জামান শিমু।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page